
স্নায়ুর চাপে আমরা অনেক সময় বিচলিত হই।
তখন এমন সব কাজ করি যা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যায়। নার্ভাস হ্যাবিট বললে সঠিক বলা
হবে এদের। নিজের কাছে সেগুলো হয়ে উঠে বিরক্তিকর এমনকি চার পাশের লোকদের
কাছেও। কিছু কিছু স্নায়ুবিক অস্থিরতা বা অকিঞ্চিত্ বিষয়ে এস্তব্যস্বতা
স্বাস্থ্যের সত্যিকারের ক্ষতি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, নখ-কামড়ানো,
কেশ মোচড়ানো, এরকম আরও কিছু নিরীহ অভ্যাসগুলো সত্যি স্বাস্থ্যের ঝুঁকি হতে
পারে। যেমন-
নখ কামড়ানো
ভয়ের কোন ছবি ছবিঘরে দেখে স্নায়ুবিক
উত্তেজনা বশে নখ কামড়াতে পারেন, কিন্তু নখ কামড়ানো যদি নিয়মিত অভ্যাস হয়
তাহলে এতে নখ এবং চারপাশের ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। বলেন নিউ ইউর্ক সিটির
ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা: মাইকেল শাপিরো। মুখগহ্বর থেকে জীবানু স্থানান্তরিত হতে
পারে ত্বকে এমনকি ত্বক থেকে মুখেও অনুরূপ স্থানান্তরিত হতে পারে। ডা:
শাপিরো বলেন, নখের নিচে রোগ জীবানু যেতে পারে মুখগহ্বরে, হতে পারে মাড়ি ও
গলদেশের সংক্রমণ। নখ রাঙ্গালে হয়ত নখ কামড়ানো নিরুত্সাহিত হতে পারে।
চুল মোচড়ানো ও টানা
আঙ্গুল দিয়ে চুল মোচড়ানো, পেঁচানোর
অভ্যাস হলে কালক্রমে চুলের গোড়ার অনেক ক্ষতি হয়। এমনি অভিমত নিউ ইয়র্কের আর
একজন ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা: এরিয়েল ওস্টাড-এর। এতে কোনও কোনও স্থান কেশহীন হয়ে
যেতে পারে। এমনকি হতে পারে সংক্রমণও। ডা: ওস্টাড বলেন, বাঁধাহীনভাবে কেশ
আকর্ষণ মানসিক রোগের লক্ষণ হতে পারে। চিকিত্সা বিজ্ঞানে বলে,
ট্রাইকোটিলোম্যানিয়া। এর জন্য প্রয়োজন হয় সাইকোথেরাপি ও ওষুধ দিয়ে চিকিত্সা
করা।
হঠাত্ করে ঘাড় মট্কানো
এতে আকষ্মিক আওয়াজ হয়। গলাকে হঠাত্ জোর
করে একদিকে মোচরানো হলে কশেরুকাগুলোর মধ্যবর্তী সন্ধিস্থলে যে গ্যাস তৈরি
হয়ে থাকে সেই গ্যাস উত্সারিত হয় এবং ফট ফট আওয়াজ করে। এতে আরাম বোধ হলেও
বারবার গলদেশকে এমন মোচড়ালে পরিপার্শ্বের সন্ধিবন্দনীগুলো অতিসচল হয়ে উঠে।
ফলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এমনি অভিমত দিয়েছেন, ফ্লোরিডার
অর্থপেডিক সার্জন ডা: মাইকেল গ্লিবারের। এছাড়া হাড়ের গিটের এত অতিরিক্ত
চলনের জন্য এতে ক্ষয় হতে পারে। পরিনামে আথ্রাইটিসের মত সমস্যা। বিরল
ক্ষেত্রে এরকম বারবার ঘাড় মটকালে স্টোকও হতে পারে।
বারবার মুখমন্ডল স্পর্শ করলে
বারবার মুখমন্ডল স্পর্শ করলে বা ব্রণ
খোটালে ত্বকের উপরের অনুক্ষুদ্র স্তরের ক্ষতি হয়। বলেন ত্বক চিকিত্সক
জেসিকা ক্রান্টি। এথেকে রক্তক্ষরণ হলে ত্বকে স্থায়ী ক্ষত তৈরি হয়। তাই ব্রণ
খোটা বা যে স্থানে চুলকাচ্ছে সেখানে চুলকানো ঠিক নয়। এতে আলতোভাবে ক্রিম
বা ময়শ্চারাইজার প্রয়োগ করা ভালো।
দাঁত কিড়মিড় করা
মানসিক চাপে দাঁত কিড়মিড় করা বা দাঁত
জোরে ঘষা মুখ গহ্বরের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। দাঁত
কিড়মিড় করলে দাঁত চূর্ন হতে পারে বা দাঁতে ফাটল লাগতে পারে, তখন দাঁতের
মেরামতি বা রুট ক্যানাল প্রয়োজন হতে পারে। চোয়ালের হাড়ের গিট ক্ষতিগ্রস্ত
হতে পারে। দন্ত চিকিত্সক জাস্টিন ফিলিপ বলেন, মানুষ মানসিক চাপে দাঁত
কিড়মিড় করে বা ঘষে। তবে বেশিরভাগ ঘটে নড়বড়ে দাঁত, দন্তহীন হওয়া বা
ত্রুটিপূর্ণভাবে দাঁত লাগানোর জন্য। প্রয়োজন হতে পারে অর্থোডন্টিক
চিকিত্সকের।
শক্ত ক্যান্ডি চোষা
শক্ত ক্যান্ডি চুষলে দাঁত চিনি ও লালার
মিশ্রণে ভেসে যায়, দাঁতে তৈরি হয় গহ্বর। ব্যাকটেরিয়া সুগার গ্রহণ করতে
থাকে, দাঁতের স্থায়ী ক্ষয় ঘটে। দাঁতের আরও ক্ষতি হয়।
ঠোটকে চোষা বা কামড়ানো
স্নায়বিক উত্তেজনায় ঠোট চুষলে মুখগহ্বরে
পাচক রসের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে বলে অভিমত দেন নিউ ইয়র্কের ত্বক
বিজ্ঞানী হুইটনি বাওয়ে। এসব এনযাইম ত্বককে কিছুটা খেয়ে ফেলে, ঘটে
ডার্মাটাইটিস ও প্রদাহ: ত্বক হয় গাঢ় রঙের, ঘটে প্রদাহ। স্ফোটক সৃষ্টি হতে
পারে এমনকি ছোট টিউমারও।
চোয়ালের ভেতর দিকে একনাগাড়ে কামড়ানো
নখ কামড়ানোর মত, চোয়ালের ভেতর দিকে
কামড়ানো ও স্নায়বিক উত্তেজনা বশে বদভ্যাস হতে পারে। ত্বক চিকিত্সক রিংগার
বলেন, ক্রমে ক্রমে চেয়ালের ভেতর ফুলে যায় আর তখন কামড়ানো ও চিবানো সহজ হয়ে
পড়ে। শুকিয়ে যাবার পরও অভ্যাস চলতে থাকে, ক্রমে ক্রমে হয় ক্রণিক প্রদাহ,
রক্তক্ষরণ। ক্ষতও তৈরি হতে পারে অনেক ক্ষেত্রে।
অধ্যাপক ডা: শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস
বারডেম, ঢাকা
No comments:
Post a Comment